যুধিষ্ঠির মহারাজ শ্রীকৃষ্ণের নিকট প্রশ্ন করলেন-অধিমাসে কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম কি? ব্রতের বিধান বা কি?

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে যুধিষ্ঠির! মানুষের ভক্তি মুক্তি প্রদাতা এই পবিত্র একাদশীর নাম পরমা একাদশী অথবা কমলা একাদশী! তোমার প্রতি স্নেহবশতঃ অশেষ মহিমাযুক্ত পুরুষোত্তম মাসের কৃষ্ণ-পক্ষীয়া একাদশীর মহিমা বলছি ব্রাহ্ম মূহুর্তে শয্যা পরিত্যাগপূর্বক যথাবিহিত স্নান-আহ্নিকাদি সেরে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর প্রীতি কামনায় শ্রীভগবানের নামমন্ত্র জপ করতে হয়। গৃহেতে যে পরিমাণে জপ করবে নদীতীরে তার দ্বিগুণ, তীর্থে শতগুণ, গোষ্ঠে সহস্রগুণ, তুলসীর নিকটে লক্ষগুন এবং বিষ্ণুর সম্মুখে জপে অসংখ্যগুন ফল লাভ হয়।

 অবন্তীনগরে বিশ্বকর্মা নামে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তাঁর পাঁচটি পুত্র ছিল। তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের নাম জয় শর্মা। কোন দুষ্কর্ম করায় পিতা-মাতা তাকে বাড়ী থেকে বহিষ্কৃত করে দেয়। এক সময় ভ্রমণ করতে করতে প্রয়াগে এসে ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নানকার্য সমাপনান্তে ক্ষুধায় কাতর হয়ে মলিন বদনে কোন একমুনির আশ্রমে উপস্থিত হলেন। সে দিন আবার এই একাদশী তিথি। অনেক ভক্তবৃন্দ মুনি মুখপদ্ম বিগলিত একাদশী মহিমা শ্রবণ করতঃ ব্রত পালন করছেন। ঐ ব্রাহ্মণও ব্রত কথা শুনে ব্রত পালন করলেন। তাঁর ব্রতোপবাসে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং লক্ষ্মীদেবী দর্শন দিয়ে বললেন- “ভক্তির সঙ্গে এই উপবাস পালন করায় আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। তোমাকে বর দান করতে আমি এসেছি। আমার নাম লক্ষ্মী। আমি পরম কৃপালু নারায়ণ কর্তৃক প্রেরিতা হয়ে বৈকুন্ঠ থেকে এসেছি। তোমার বংশে শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণগণ জন্মগ্রহণ করবে। আমি সত্যই বলছি-আমার নাম লক্ষ্মী।”

ব্রাহ্মণ বললেন- হে কমলে! সত্যিই যদি আমা প্রতি প্রসন্ন হয়ে বর দিতে চান তবে এই বর দিন যে, “ভক্তিভরে এই ব্রত পালন করবে সে অন্তে বৈকুণ্ঠ ধামে গমন করবে।।”

শ্রীকৃষ্ণ বললেন, লক্ষ্মীদেবী *#তথাস্তু* বলে বর প্রদান করে অন্তর্হিতা হলেন। অনন্তর সেই বিপ্রধনশালী হয়ে সুখে হরিস্মরণ করে দেহান্তে ভগদ্ধামে গমণ করলেন। কমলার আশীর্বাদে ব্রাহ্মণ ধন্য হয়েছিলেন। তাই এই একাদশীকে ‘কমলা’ একাদশীও বলা হয়।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ যুধিষ্ঠিরকে আর এক মনোরম কাহিনী বলছেন। একদা কাম্পিল্য নগরে সুমেধা নামে এক ধার্মিক ব্রাহ্মণ বাস করতেন। পবিত্রা নাম্নী তাঁর এক পতিব্রতা সহধর্মিনী ছিল। কিন্তু কোন পাপকার্য্যর জন্য তারা এত দরিদ্র হলো যে অন্ন-বস্ত্র পর্যন্তও তাদের জুটত না। এর মধ্যেও যদি কখনও অতিথি আসে তখন নিজেরা না খেয়ে যতটুকু সম্ভব অতিথি সৎকার করতেন। ব্রাহ্মণের স্ত্রীর মনে একটুও দুঃখ ছিল না। একদিন ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণীকে বলছেন- হে ব্রাহ্মণী! আমি কিছু ধনের প্রত্যাশী হয়ে বিদেশী যাত্রা করতে চাই, বুদ্ধিমান ব্যক্তি উদ্যম ও উৎসাহকে ভঙ্গ করে না, সামর্থকে অবহেলা করা উচিৎ নয়। তখন ব্রাহ্মণী বলছেন- হে স্বামিন! আপনার চেয়ে অধিক বিদ্বান আমি নই, তবে এইটুকু জানি-বিদ্যা, ধন, দারিদ্রতা সর্বত্রই পূর্বজন্মার্জিতফল। পূর্বজন্মে কোন ফল না থাকলে বর্তমানে কি কেউ সুখে থাকতে পারে? আমরা ধন সম্পদ অনেক পেয়েছিলাম-কিন্তু কাউকে অন্ন দান করিনি। তাই আমাদের অন্ন জুটছে না। হে পতি দেবতা! তুমি ধনের জন্য অন্যত্র গেলে আমাকে লোকে দুর্ভাগা বলে নিন্দা করবে। অতএব তুমি এখানে থেকে যা লাভ কর, ওতেই আমি সন্তুষ্ট। পতিব্রতার কথা শুনে ব্রাহ্মণ দেশে রয়ে গেলেন। একদিন তাদের ভগ্ন কুটিরে কৌণ্ডিল্য মুনি এলেন। পরম শ্রদ্ধা সহকারে পাদ্যার্ঘ দ্বারা উভয়ে মুনিকে প্রণাম করে  বিধিপূর্বক ভোজন করালেন। ব্রাহ্মণী জিজ্ঞাসা করলেন- হে মহামুনে! কিসে দারিদ্রতা নাশ হয়? এমন কোন উত্তম ব্রতের কথা বলুন যাতে পাপ-দুঃখ দারিদ্রতা দুর হয় এবং ভগবানে ভক্তির উদয় হয়! তখন কৌণ্ডিল্য মুনি বললেন, মলমাস বা অধিকমাসে কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী ব্রত ভুক্তি, মুক্তি প্রদায়িনী, সর্বপাপ বিনাশিনী, সর্ব সুখদায়িনী এবং ভগবানের অতীব প্রিয়তমা তিথি। প্রথমে কুবের এই ব্রত পালন করেছিলেন। রাজা হরিশ্চন্দ্র এই ব্রত পালনে স্ত্রী-পুত্র ও রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন। হে বিশালাক্ষী! এই জন্য তোমরাও এই ব্রত পালন কর।

হে পাণ্ডব! কৌণ্ডিন্য মুনির উপদেশে পতি-পত্নী উভয়ে একসঙ্গে বিধিমতো পুরুষোত্তম মাসের পরমা একাদশী ব্রত পালন করলেন। ব্রত সমাপনের পর রাজভবন থেকে এক রাজকুমার তাঁদের কাছে এলেন। ব্রহ্মার প্রেরণায় তিনি বহু ধনসম্পদ, নতুন গৃহ ও গাভী এই দম্পতীকে দান করলেন। এই দানের ফলে মৃত্যুর পর সেই রাজা বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হয়েছিল। এইভাবে পরমা ব্রতের প্রভাবে ব্রাহ্মণ-দম্পতির সকল দুঃখের অবসান হল।

যে মানুষ এই একাদশী ব্রত পালন না করেন, তিনি চৌরাশি লক্ষ যোনিতে ভ্রমণ করেন। বহু পূণ্যকর্মের ফলে দুর্লভ মানব-জন্ম লাভ হয়েছে। তাই মানব-জীবনে এই একাদশী ব্রত পালন করা অবশ্য কর্তব্য। এই মাহাত্ম শুনে মহারাজ যুধিষ্ঠির তাঁর আত্মীয়বর্গের সঙ্গে এই ব্রত পালন করেছিলেন।

#একাদশীর পারনের মন্ত্র:

একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।”

– এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পারন করুন।

One thought on “শ্রীপরমা/কমলা_একাদশী_মাহাত্ম্য:”
  1. Way cool! Some very valid points! I appreciate you writing this article plus the rest of the site is also very good.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved.Rajbangshi.com