হরিনাম নামীর চেয়েও করুণাময়, নাম এবং নামী এক বস্তু হলেও নামের করুণা নামীর চেয়ে অধিক। বৃহদ্ভাগবতামৃতে গোপকুমারের প্রতি
বৈকুণ্ঠপার্ষদগণের উক্তি–
শ্রীনামপ্রভোস্তস্য শ্রীমূর্তেরপাতি প্রিয়ং।
জগন্ধিতং সুখোপস্যাং সরসং তৎসমং নহি॥
অর্থাৎ- নারায়ণের মূর্তি অপেক্ষাও নামপ্রভু অধিক প্রিয়, জগতের জন্য মঙ্গলজনক, সুখের উপাস্য ও সরস, অতএব হরিনামের সমান আর কিছু নেই।
শ্রীনাম অধিকার অনধিকার বিচার না করে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা যেকোনোভাবে সেবিত হয়েই সকলের উপকার করে থাকেন। শ্রীনাম সুখোপাস্য অর্থাৎ জিহ্বার স্পন্দন মাত্রই সেবিত হয়ে থাকেন। কিন্তু ভগাবন স্বয়ং বা তাঁর শ্রীবিগ্রহ অর্চন করার জন্য অধিকার ও বিধির প্রশ্ন আসে। স্বয়ং ভগবান এবং তাঁর নাম এক হলেও ভগবান তাঁর নামস্বরূপে অধিক কৃপা প্রকট করেছেন। কারণ নামী কেবল সাধ্য, কিন্তু নাম সাধ্য ও সাধন উভয়ই।
উপমা:–
উকিল ও বিচারক পৃথক ব্যক্তি হলে মামলায় জেতার জন্য ভালো উকিলের তত্ত্বাবধানে মামলা পরিচালনা করলেও বিচারকের রায়ের অপেক্ষায় থাকতে হয়। জয় লাভের ক্ষেত্রে সন্দেহমুক্ত হওয়া যায় না। কিন্তু উকিল ও বিচারক যদি একই ব্যক্তি হন (যদিও এ জগতে প্রায় অসম্ভব), অর্থাৎ আজকে যিনি উকিল হয়ে পক্ষ অবলম্বনপূর্বক মামলায় জেতার উপায় উপদেশ করলেন, তিনিই যদি কাল বিচারকের আসনে বসে বিচার করেন, তবে জয়লাভের ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না। একেবারে বুক ঠুকে বলা যায় যে, জয় নিশ্চিত। সাধন হিসেবে হরিনামও ঠিক এমনই– উকিলও আবার বিচারকও বটে। একাধারে সাধ্য ও সাধন উভয়ই হরিনাম সাধনের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ, আবার সাধ্যের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ। যাঁরা হরিনাম সাধন করছেন, তাঁদের হরিপ্রাপ্তির কোনোই সন্দেহ নেই, আর যাঁদের হরিপ্রাপ্তি হয়েছে, তাঁদের হরিনামই হরি।
শ্রীহরিভক্তিবিলাসে শাস্ত্র বাক্য তুলে ধরে বলা হয়েছে–
নাম্নাং মুখ্যতরং নাম কৃষ্ণাখ্যং মে পরন্তপ।
প্রায়শ্চিত্তশেষাণাং পাপানাং মোচকং পরম্।।
(১১/২৬৪)
অর্থাৎ– হে পরন্তপ, আমার নাম সমূহের মধ্যে ‘কৃষ্ণ’ নামই মুখ্যতর, তা অশেষ পাপের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ এবং প্রধান মুক্তিদায়ক।
এ স্থলে কৃষ্ণ নামের কথা বলা হয়েছে, মন্ত্রের কথা বলা হয় নি। “মন্ত্র” শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ:- “যা মনন করার মাধ্যমে ত্রাণ পাওয়া যায়।” অর্থাৎ মুক্তিলাভ করা যায়। মন্ত্রকে নাম বলা হয় না। মন্ত্রের মধ্যে ভগবানের নাম থাকে বলে মন্ত্রকে নামাত্মক বলা হয়।
মন্ত্রে “নমঃ”, “ওঁ”, “ক্লীং”, “স্বাহা” ইত্যাদি থাকে, কিন্তু ভগবানের নামে তা থাকে না। মন্ত্র ও নামের মহিমা সমান নয়। মন্ত্রে নাম অবস্থান করে বলেই মন্ত্রের মন্ত্রত্ব। স্বয়ং ভগবান শ্রীগৌরসুন্দর কৃষ্ণমন্ত্র ও কৃষ্ণনামের বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছেন–
“কৃষ্ণমন্ত্র হৈতে হবে সংসার-মোচন।
কৃষ্ণনাম হৈতে পাবে কৃষ্ণের চরণ।।
নাম বিনা কলিকালে নাহি আর ধর্ম।
সর্বমন্ত্র সার নাম- এই শাস্ত্র মর্ম।।
(চৈ.চ. আদি ৭/৭১-৭২)
অর্থাৎ– কৃষ্ণমন্ত্রের দ্বারা সংসার থেকে মুক্তি লাভ হয় আর কৃষ্ণনাম দ্বারা জীব ভক্তি লাভ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণ প্রাপ্ত হয়। এজন্য সাধন হিসেবে মন্ত্র অপেক্ষা নাম শ্রেয়।
যেন জন্মশতৈঃ পূর্বং বাসুদেবঃ সমর্চিতঃ।
তন্মুখে হরিনামানি সদা তিষ্ঠন্তি ভারত।।
হরিভক্তিবিলাস (২/১১/৪৫৪)
অর্থাৎ– হে ভরতবংশজ, যিনি পূর্বে শত শত জন্ম ধরে শ্রীবাসুদেবকে সম্যকভাবে অর্চন করেছেন, তাঁর মুখে শ্রীহরির নাম সর্বদা বিরাজ করেন। (এখানে শত শত জন্মের অর্চনের চেয়েও হরিনামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন হয়েছে। ) ভগবানের নাম ভগবান হতে অভিন্ন। মন্ত্রসিদ্ধির মাধ্যমে যা লাভ হয়, কেবল নামের আভাসেই তা অনায়াসে লাভ করা যায়। মন্ত্রেও নামই বিদ্যমান। মন্ত্র থেকে নামকে পৃথক করলে মন্ত্রের মন্ত্রত্বই থাকে না। কিন্তু শুধুমাত্র নাম উচ্চারণ করলেই মন্ত্র উচ্চারণ হয়ে যায়। মন্ত্র অপেক্ষা নামের মহিমা অত্যধিক বলেই নামকে মহামন্ত্র বলা হয়।
মন্ত্রে ভগবান বা ঋষিগণের শক্তি আহ্বান করা হয়, কিন্তু মহামন্ত্র বা নাম সর্বশক্তিমান ভগবানের অভিন্ন প্রকাশ। অনেকেই মনে করেন, মন্ত্রের দ্বারা ভোগাদি নিবেদন করা যায়, কিন্তু নামের দ্বারা করা যায় না। এ ধারণা দূর করার জন্য শ্রীমন্মহাপ্রভু স্বয়ং শিক্ষা দিয়েছেন-
ভিক্ষা নিমন্ত্রণে প্রভু বলেন হাসিয়া।
চল, আগে তুমি লক্ষেশ্বর হও গিয়া৷।
প্রভু বলে, জানো- লক্ষেশ্বর বলি কারে?
প্রতিদিন লক্ষনাম যে গ্রহণ করে।।
সে জনের নাম আমি বলি লক্ষেশ্বর।
তথা ভিক্ষা আমার, না যাই অন্য ঘর।।
(চৈ.ভা ১০/১১৭,২১-২২)
প্রতিদিন লক্ষ নাম গ্রহণ না করা পর্য্যন্ত ভগবান মন্ত্রের দ্বারা প্রদত্ত নৈবেদ্যও গ্রহণ করতেন না। শ্রীখণ্ডের মুকুন্দের পুত্র রঘুনন্দন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র হল রঘুনন্দন রচিত ১৬ শব্দের একটি বৈষ্ণব মন্ত্র যা কলি-সন্তরণ উপনিষদে বর্ণিত, এবং যা ষোড়শ শতাব্দীর সময় থেকে চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষণের মাধ্যমে ভক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। গৌড়ীয় বৈষ্ণব তত্ত্ববিদ্যা অনুসারে, একজনের মৌলিক চেতনা এবং জীবনের লক্ষ্য হল ভগবানের (শ্রীকৃষ্ণ) প্রতি বিশুদ্ধ প্রেম। হরে কৃষ্ণ’ মন্ত্রটি সম্বোধন পদ একবচনে “হরে”, “কৃষ্ণ”, এবং “রাম” সংস্কৃত শব্দত্রয় দ্বারা রচিত। এটি একটি অনুষ্টুপ ছন্দের (আট অক্ষর দ্বারা গঠিত চার পংক্তির পদ শ্লোক ) কবিতার স্তবক।
শ্রীমুকুন্দাচার্য্য শ্রীবামনদেবকে (ভা.৮/২৩/১৬) বলেছেনঃ
“মন্ত্রতস্তন্ত্রতশ্চিদ্রং দেশকালাহবস্তুতঃ।
সর্বং করোতি নিশ্ছিদ্রংমনুসংকীর্তনং তব।।”
অর্থাৎ– উচ্চারণের ত্রুটি হেতু মন্ত্রগত, ক্রমবিপর্যয়াদি দ্বারা তন্ত্রগত এবং দেশগত, কালগত, পাত্রগতৎ এবং দক্ষিণাদি বস্তুগত যে যে ত্রুটি ঘটে, আপনার নাম সংকীর্তন সেসকলকে নির্দোষ করে। কলিযুগপাবনাবতারী শ্রীগৌরহরি স্বয়ং ষোলনাম বত্রিশ অক্ষর সমন্বিত শ্রীকৃষ্ণনামকে “মহামন্ত্র” বলে অভিহিত করেছেন।
প্রভু বলে কহিলাম এই মহামন্ত্র।
ইহা জপ, গিয়া সবে করিয়া নির্বন্ধ।।
(চৈ.ভা.মধ্য ২১/৭৮)
এছাড়া হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কে মহামন্ত্র বলার আরো কিছু কারণ হলো, তা মন্ত্র ও নাম উভয়ই। অন্য মন্ত্রে যেমন দীক্ষা প্রদান করা হয়, হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রে তেমনি দীক্ষা প্রদান করা হয়। আবার তা গ্রহণ করবার জন্য দীক্ষারও অপেক্ষা করতে হয় না। গুরুদেব শিষ্যকে মহামন্ত্র দীক্ষা প্রদান করেন। গৌড়ীয় সম্প্রদায়ে এ ধারা প্রচলিত। যদি তা কেবল নাম হতো, তাহলে গুরুর কাছ থেকে দীক্ষার প্রয়োজন হতো না।
তবে এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এ মন্ত্র ত্রিকাল, একাসনে উপবেশন, করন্যাস ও শৌচাদি মন্ত্রবিধির অতীত। এ মহামন্ত্র তারক (মুক্তিদানকারী) ও পারক (প্রেমদানকারী) উভয়ই। প্রতি কলিযুগে যুগাবতারের দ্বারা প্রবর্তিত কলির যুগধর্ম মহামন্ত্রকে তারকব্রহ্ম নাম বলা হয়। যা কেবল মুক্তি প্রদান করে। কিন্তু যে বিশেষ কলিযুগে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু অবতীর্ণ হয়ে নাম বিতরণ করেন, সে নাম পারকব্রহ্মনাম বলে খ্যাত। অর্থাৎ এ হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার মাধ্যমে কৃষ্ণপ্রেম লাভ করা যায়। এজন্য মহাপ্রভু প্রদত্ত এ হরিনাম কৃষ্ণপ্রেম প্রাপ্তির জন্য গ্রহণ করা সর্বোত্তম ও অবশ্য কর্তব্য। এই পৃথিবীতে একমাত্র মুক্তির উপায় হলো “হরে কৃষ্ণ” মহামন্ত্র। এর চাইতে সহজ রাস্তা আর কোথাও নেই। এই কলিযুগে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এবং নিত্যানন্দ মহাপ্রভু এই নাম জীবের কল্যাণের জন্য এনেছেন। বৈষ্ণব নাম-ব্যুৎপত্তি অনুসারে, “হরে” শব্দটিকে ভগবান বিষ্ণুর অপর নাম “হরি” সম্বোধনসূচক পদ হিসাবে ব্যক্ত করা যায়, যার অর্থ “যিনি জাগতিক মোহ মুক্ত করেন”। তাই এই হরে কৃষ্ণের মূল মন্ত্রের ‘হরে’ শব্দটি ‘হরা’ (অর্থাৎ, যা হরণ করে) শব্দটির দ্যোতক। এটির মূর্তিরূপ হলেন পরম সত্ত্বা শ্রীকৃষ্ণের শাশ্বত সঙ্গী বা তার দিব্যলীলার শক্তি (‘নাদশক্তি’) রাধা। কলি-সন্তরণ মন্ত্রে রাধার নাম আটবার উচ্চারিত হয়েছে। এটি দিব্যপ্রেমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ভগবানের অপর দুই রূপ “কৃষ্ণ” (যিনি সবাইকে আকর্ষণ করেন) ও “রাম”-এর (যিনি সকল আনন্দের কারণ) নাম চারবার করে উচ্চারিত হয়েছে।
“হরে রাম” শব্দদুটির “রাম” নামটিকে কখনো কখনো কৃষ্ণের আরেক নাম ‘রাধারমণ’ (যিনি রাধার প্রিয়তম) হিসাবেও ব্যক্ত করা হয়। তবে সাধারণভাবে এটিকে, কৃষ্ণের আগের অবতার, রামায়ণের রাম হিসাবে উল্লেখ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে, কৃষ্ণের অগ্রজ ভ্রাতা বলরাম-এর খণ্ডনাম হিসাবেও এর অনুবাদ করা হয়। হিন্দুধর্মের গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে এই মন্ত্রটি বিশেষ জনপ্রিয়। খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দীতে ভক্তি আন্দোলনের নেতা চৈতন্য মহাপ্রভু সারা ভারতে বিশেষত বাংলা ও উড়িষ্যায় “প্রতি নগরে ও গ্রামে” ভ্রমণ করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে এই “মহামন্ত্র”টি জনপ্রিয় করে তোলেন। গৌড়ীয় বৈষ্ণব প্রথা অনুসারে, মন্ত্রটি উচ্চৈঃস্বরে বারংবার সংগীতবাদ্য সহযোগে ভজন, দলবদ্ধভাবে কীর্তন বা একান্তভাবে মনে মনে জপ করা হয়। কারণ, এমন করলে মন্ত্রের শব্দ উচ্চারণকারী এবং শ্রোতা উভয়কে মুক্তি দান করবেন ভগবান।
ভগবান চরণ লাভ করতে আমাদের কিছু বর্জন করতে হবে—
১. লোভ ২. ঘৃণা ৩. অহংকার ৪. কাম ৫. হিংসা ৬. অসৎপথ ৭. অসৎসঙ্গ ৮. ক্রোধ ৯. স্বার্থপরতা ১০. আমিত্ব ভাব, ইত্যাদি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
আর ভগবানকে পেতে হলে আমাদের কিছু করতে হবে–
১. কৃষ্ণভক্তের ভক্তের চরণ সেবা ২. জীবে দয়া ৩. সাধু সঙ্গ ৪. কির্তন করা ৫. সৎ জীবন যাপন করা ৬. শ্রীমদভগবদ গীতা পাঠ ৬. সবাইকে কৃষ্ণপ্রেমে আকৃষ্ট করা ৭. একাদশী সহ প্রতিটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে সম্পর্কিত উপবাস পালন করা ৮. নিয়মিত জপ করা, ইত্যাদি।
এখন কথা হলো এইগুলোকি হুট করের শুরু করা সম্ভব?
“না” এইগুলা আপনাকে ধীরে ধীরে করতে হবে। আপনি চাইলেই একসাথে একদিনেই সব শুরু করতে পারবেন না। ভগবানের পথে নিজেকে এগিয়ে নিতে হবে। আর অন্তরে রাখতে হবে অগাধ কৃষ্ণপ্রেম। যার মনে কৃষ্ণপ্রেম নেই সে কখনোই উপরের একটি কাজেও নিজকে মনোনিবেশ করাতে পারবেন না। চৌষট্টির প্রকার ভক্ত্যঙ্গ আছে, তার মধ্যে ন’টা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ, ন’টার মধ্যে মুখ্য আরও পাঁচটা (সাধু-সঙ্গ, নাম-সঙ্কীর্ত্তন, ভাগবত-শ্রবণ, মথুরা-বাস, শ্রীমূর্ত্তির শ্রদ্ধায় সেবন), আর তার মধ্যে মূল শ্রেষ্ঠ হচ্ছে নাম-সঙ্কীর্ত্তন । “নিরপরাধে নাম লইলে পায় কৃষ্ণপ্রেমধন”-নিরপরাধে নাম নিলে তবে কৃষ্ণ-প্রেম-ধন লাভ করতে পারব । কিন্তু নিরপরাধে নাম নিতে হবে, অপরাধ যুক্ত হয়ে হরিনাম করলে কাজ হবে না । তাই সময় থাকতে এখনি কৃষ্ণ নাম স্মরণ করুন, সৎ পথে জীবন যাপন করুন। এতোগুলো জীবনতো নিজের জন্যই করে আসলেন এবারের মানব জনম না হয় ভগবানের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করুন।
হরি নামের মহিমার বর্ণনায় শাস্ত্রে ভগবানের কৃষ্ণ, রাম, বিষ্ণু, নারায়ণ, গোবিন্দ, বাসুদেব, হরি আদি ভগবৎস্বরূপ-বাচক শব্দবিশেষই উল্লেখ করা হয়েছে। একটি ছোট গল্প বলছি- একদিন একজন অধার্মিক লোক একজন ধার্মিক লোককে বলছে, আচ্ছা! হরিনাম করলেও মানুষের মৃত্যু হয়, না করলেও মৃত্যু হয়। তাহলে করার চেয়ে না করাইতো ভাল।
ধার্মিক ব্যক্তিটি ববললেন—
হ্যাঁ মানুষ হরিনাম করলেও মরে, না করলেও মরে। তবে কি জানো ! যারা হরিনাম করে তাদের মৃত্যু হয় একভাবে আর যারা হরিনাম করেনা তাদের মৃত্যু হয় আরেক ভাবে।
তখন অধার্মিক লোকটি বলছে তা কেমন? ধার্মিক লোক বলল, শুনো তাহলে! কখনো বিড়ালের শাবক (বিড়াল ছানা/বাচ্চা) হতে দেখেছো? বিড়াল শাবকের জন্মের কয়েকদিন পর যখন স্থান (জায়গা) পরিবর্তন করে। তখন বিড়াল তার বাচ্চাকে মুখে করে দাঁতে আটকে অন্য স্থানে নিয়ে যায় ঠিকই। কিন্তু অতি যত্নে, স্নেহে, মমতা ও ভালবাসা সহকারে নিয়ে যায়। বিড়াল শাবকের শরীরের কোথাও কোনো আঘাত লাগে না। আবার যখন ঐ বিড়ালই যখন একই ভাবে কোনো ইঁদুরকে শিকার করে, তখনও মুখে করে দাঁতে আটকে নিয়ে যায়। কিন্তু আঁচড়ে, রক্তাক্ত করে আঘাতে আঘাতে নিয়ে যায়।
তেমনি আমাদের মৃত্যুও এমন করেই হবে। যারা হরিনাম করবে তাদেরকে ভগবানে ঠিক বিড়াল শাবকের মতো মমতা ও ভালবাসার সহিত এই ভবসাগর হতে পার করে গোলকধামে নিয়ে যাবেন। আর যারা হরিনাম বিমুখ, হরিনাম করবে না। যমদূত তাদেরকে ঐ ইঁদুরের মতো করে আঁচড়ে, আঘাতে, অধিক যন্ত্রনা দিয়ে এই ভবসাগর হতে নিয়ে গিয়ে নরকে ফেলবেন। পরীক্ষিত মহারাজ ভাগ্যবান ছিলেন। তাই মৃত্যুর সাতদিন আগে জানতে পেরেছিলেন, আগামী সাতদিনের মধ্যে তাঁর মৃত্যু। তখন আর সময় নষ্ট না করে আগত মৃত্যুর সাতদিন ভাগবত আস্বাদন (শ্রবণ) করে, ভাগবতধামে ফিরে গিয়েছিলেন।
আর আমরা অধম কলির জীব মৃত্যু নামক রেলগাড়িটা কবে, কখন আসবে জানিনা। বলা তো যায় না আজ আছি, কাল নেই। নিশ্বাসের বিশ্বাস নেই। তাই এখনও সময় আছে, যে যতটুকু পারি হরিনাম করি।
হরিনাম সাধ্য ও সাধন উভয়ই-
বাঞ্ছিত প্রয়োজনীয় বস্তুই সাধ্য। সেই সাধ্যবস্তু বা প্রয়োজন লাভের জন্য যে উপায় অবলম্বন করা হয়, তা-ই সাধন। যেমন কেউ যদি বাড়ি বানাতে চায়, তবে বাড়ি বানানো তার প্রয়োজন বা সাধ্য আর বাড়ি বানানোর জন্য যা যা করতে হবে তা সাধন। সাধ্য ভিন্ন হলে সাধনও ভিন্ন হয়। স্বর্গলাভ সাধ্য হলে পুণ্যকর্ম তার সাধন, মোক্ষলাভ সাধ্য হলে জ্ঞান তার সাধন। পরমাত্মার দর্শনলাভ সাধ্য হলে যোগ তার সাধন। অর্থাৎ সবক্ষেত্রেই সাধ্য ও সাধন পৃথক বস্তু। কোনো ক্ষেত্রেই সাধ্য ও সাধন এক বস্তু নয় এবং সাধ্যবস্তু প্রাপ্ত হলে আর সাধনার প্রয়োজন হয় না। যেমন কেউ কর্মের দ্বারা সিদ্ধি লাভ করলে তার আর কর্ম করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু হরিনাম সাধকের সিদ্ধ ও সাধন উভয় অবস্থার জন্যই প্রযোজ্য।
জীব কৃষ্ণপ্রেম প্রাপ্ত হয়ে সিদ্ধি লাভ করার পূর্ব পর্যন্ত নামীর স্বরূপকে দেখতে পায় না, এমনকি সাধনকালেও তাঁর দর্শন লাভ হয় না। কিন্তু নাম সর্বদা জীবের জন্য অত্যন্ত সুলভ এবং সর্বাবস্থায় জীবের পরম বন্ধু। এ নাম জীবের সাধনাবস্থায় সাধিত হয়ে সর্বদা জীবের সঙ্গে থাকেন, আর সিদ্ধাবস্থায় সাধ্য হয়ে থাকবেন। অর্থাৎ নাম সাধন ও সাধ্যরূপে সর্বদাই সাধকের সঙ্গে আছেন। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, নামই সাধ্য এবং নামই সাধন। একটি কাহিনীর মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলো–
”সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপাড়ে স্বর্ণপুরীতে ছিলো এক রাজার কুমার। আর এ পাড়ের এক তালবনে তালপাতার ঘরে থাকতো এক সুন্দরী তরুণী। খেলার বয়স ছাড়িয়ে উঠতেই সাত সাগরের ওপাড়ের রাজকুমারের সাথে তার বিয়ে হয়েছিলো শৈশবেই। তারপর এ পর্যন্ত আর স্বামীর সাথে তার দেখা হয়নি। স্বামীর দর্শন লাভের বাকুলতায় সে কেবল পথ চেয়ে বসে থাকে, কবে তার স্বামী তার এ বিরহদশা থেকে তাকে মুক্তি দান করবেন। একদিন প্রভাতে সে যখন তার বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়ালো, তখন দেখলো এক রাজদূত তাকে তার প্রিয়তমের কাছে নিয়ে যেতে এসেছে। তাই সে রাজদূতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে তার সঙ্গে চলতে লাগল। প্রথমে রাজদূতকে তার শুভাকাঙ্ক্ষী মনে হয়েছিল। কিন্তু পথ চলতে চলতে ধীরে ধীরে সে রাজদূতের গুণের প্রতি বিমুগ্ধ হলো। রাজদূত তরুণীকে রাজপুত্রের গুণ-মহিমার কথা শোনাতে লাগলো। পূর্বে রাজপুত্রের যেসব গুণের কথা সে শুনেছিল, তা রাজদূতের মুখে শুনে তার ভালোবাসা আরো প্রগাঢ় হতে লাগলো। এদিকে রাজদূতের সঙ্গে নদী-সমুদ্র পার হতে হতে সে রাজদূতের গুণের প্রতিও আকৃষ্ট হতে লাগলো।
স্বামীর কথা শুনলেও সঙ্গলাভের ফলে রাজদূতের প্রতি তার আকর্ষণ বাড়তে লাগলো। দুই ব্যক্তির প্রতি আসক্তি জন্মানোর কারণে নিজেকে শতবার ধিক্কারও দিতে লাগল সে। যাই হোক, ইতোমধ্যেই তারা রাজপ্রাসাদের সিংহদ্বারে পৌছালো। আর কিছুক্ষণ পরই স্বামীর সাথে তার সাক্ষাৎ হবে। কিন্তু কীভাবে সেই রাজদূত তার হৃদয়ের এতটা জায়গা দখল করে নিলো? তাকেও একপলক দেখার সাধ হলো তার। অপলক দৃষ্টিতে সে তার দিকে তাকালো। তার শ্রীমুখখানি দেখামাত্র সে তার রূপে সম্পূর্ণ মুগ্ধ হলো। অতি মনোহর রূপের অধিকারী এ ব্যক্তিই কি তার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার? তার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেল যেন; উল্লাসে, উদ্বেগে আর উৎকণ্ঠায় সে ভূমিতে পড়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর এক মোহন স্পর্শে তার চেতনা হলো। চোখ খুলে দেখলো, রাজসিংহাসনে বসে আছেন সেই পরম মনোহর রাজদূত। তিনি তাকে সহাস্যবদনে বলছেন, “আমি রাজদূত নই প্রিয়তমে, আমিই তোমার সেই রাজকুমার।” এতদিন ধরে যাকে তরুণী তার হৃদয়-সিংহাসনে স্থান দিয়েছিলো, আজ তাঁর দর্শনে যেন সে পরিতৃপ্ত হলো। তাকে দূত হয়ে আনতে যাওয়ার জন্য রাজকুমারের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতাও কোটিগুণ বেড়ে গেল। রাজদূতবেশী রাজকুমারের করুণায় সে বিগলিত না হয়ে পারল না।
এ কাহিনীতে সাধন বা রাজদূত হলো নাম সংকীর্তন। সাধক বা ভক্তরূপ তরুণীকে সেই রাজদূত রাজভবনে নিয়ে গিয়ে তিনি নিজেই যে রাজপুত্র (সাধ্য বা নামী) তা দর্শন করালেন। অর্থাৎ হরিনামই সাধন এবং হরিনামই শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং।…
🌿হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে🌿
🌿 হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে 🌿
Right here is the perfect webpage for everyone who would like to understand this topic. You understand a whole lot its almost tough to argue with you (not that I really will need toÖHaHa). You certainly put a fresh spin on a subject that has been discussed for a long time. Wonderful stuff, just excellent!