শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী মহারাজ ১৯৪৫ সালে ১৭ই সেপ্টেম্বর পূর্ববঙ্গে (বর্তমান বাংলাদেশ) আবির্ভূত হন। Bমহারাজ তাঁরশৈশবের বেশিরভাগ সময় কলকাতায় কাটিয়েছেন। ১৯৭০ স মহারাজ পড়াশোনার জন্য জার্মানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সেখানে বৈদিক সাহিত্যের সম্মুখীন হওয়ার পর তিনি ভারতবর্ষের
আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের ঐশ্বর্যের ব্যাপারে উপলব্ধি করেন।
১৯৭৫ সালে আধ্যাত্মিক প্রগতির উদ্দেশ্যে সচেষ্ট হওয়ার জন্য তিনি ভারতবর্ষে ফিরে আসেন।
 
বৈদিক শাস্ত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়ন করার পর মহারাজ একজন গুরুদেবের আশ্রয় গ্রহণ করার ব্যপারে আগ্রহী গন, যিনি তাঁকে আধ্যাত্মিক মার্গ প্রর্দশন করতে পারেন। একবছর ধরে খোঁজেও
তিনি এরকম কোন গুরুদেব পেলেন না যাঁর চরণে তিনি আত্মসমর্পণ করতে পারেন, এবং তিনি খুবই হতাশ হয়ে গেলেন। ঠিক এরকম সময়ে তিনি শ্রীল এ.সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের রচিত Nectar  of Devotion  গ্রন্থটি পান। সেই গ্রন্থটির জ্ঞানগর্ভ তত্ত্ব সম্বন্ধে অবগত হওয়ার পর তিনি বুঝতে পারলেন যে তিনি তাঁর গুরুদেব এবং তাঁর পছন্দসই আধ্যাত্মিক মার্গটি পেয়েছেন। শ্রীল প্রভুপাদের আরও কিছু গ্রন্থ পড়ার শ্রীল প্রভুপাদের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা বাড়ে এবং তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার বাসনাও বেড়ে যায়। সেই সময় শ্রীল প্রভুপাদ
আমেরিকায় ছিলেন।
 
মহারাজ তখন মায়াপুরের মন্দিরে যোগদান করেন, এবং ভগবানের ভক্তিমূলক সেবায় নিযুক্ত হন, এবং সেই সাথে শ্রীল প্রভুপাদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা করতে লাগলেন। শ্রীল প্রভুপাদ যখন ১৯৭৬ সালে ভারতে ফিরলেন, অবশেষে শ্রীল প্রভুপাদের সাথে মহারাজ তখন সাক্ষাৎ করতে পারলেন। সেই প্রথম সাক্ষাতেই শ্রীল প্রভুপাদ মহারাজকে তাঁর গ্রন্থাবলী বঙ্গানুবাদ করার বৃহদ কার্য অর্পণ করেন। এবং পাশাপাশি তাঁর ভারতীয়
বিষয়ক সচীব নিয়োগ করেন। এর কয়েক মাসের মধ্যেই শ্রীল প্রভুপাদ তাঁকে গুরু-পরম্পরা ধারার সাথে দীক্ষার মাধ্যমে সম্পৃক্ত করেন, এবং কিছু সময় পরেই তিনি তাঁকে সন্ন্যাস দীক্ষা প্রদান
করেন। প্রথম সাক্ষাতে শ্রীল প্রভুপাদের নির্দেশানুসারে মহারাজ তাঁর আনুষ্ঠানিক দায়িত্বগুলোর পাশাপাশি প্রসিদ্ধ বৈদিক সাহিত্যের উপর শ্রীল প্রভুপাদের রচিত পঞ্চাশটিরও বেশি গ্রন্থ বঙ্গানুবাদ করেন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন, এবং ১৯৮৯
সালে এই পর্ষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে মহারাজ তাঁর গুরুদেব শ্রীল এ.সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের জীবনের উপর ভিত্তি করে একটি জীবনীমূলক চলচ্চিত্র বানানোর বিশাল কার্য সম্পাদন করেন। এই ধারাবাহিক চলচ্চিত্রটি “অভয়চরণ” নামে সারা বিশ্বে এবং ভারতের দূরদর্শনেদেখানো হয়।
মহারাজ ভারতের উজ্জয়ণীতে বিভিন্ন প্রকল্পের সাথেযুক্ত ছিলেন । ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে মহারাজ উজ্জয়ণী শহরে অত্যন্ত সুন্দর ও সুবিশাল মন্দির স্থাপনা করেন। এই মন্দিরে শ্রী শ্রী রাধামদনমোহন, শ্রী শ্রী কৃষ্ণ-বলরাম ও শ্রী শ্রী গৌর- নিতাইয়ের আরাধনার জন্য তিনটি বড় সিংহাসন রয়েছে। ২০২০ সালের ৪ঠা জুলাই আমেরিকায় শ্রীকৃষ্ণ মাহাত্ম্য প্রচারের সময় মর্ত্যধামের লীলা অপ্রকাট করে কৃষ্ণধামে যাত্রা করেন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *